শহীদ খুবাইব: “মা আমার নাম খুবাইব, আমিও মনে হয় শহীদ হব। আমার মাথাটা কামায় দেন।”
৫ই আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের পেছনে লুকিয়ে থাকা ৩০/৪০ জন মানুষকে ব্রাসফায়ার করে মেরে ফেলার ভিডিও টা আমাদের অনেকের মনেই প্রচন্ড দাগ কেটেছিল। আরও বেশি দাগ কেটেছিল সেই মুহুর্তে একজন সাদা জোব্বা পরা হুজুরকে প্রথমে লাঠিপেটা করে তারপর ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় পেছন থেকে গুলি করে মেরে ফেলার দৃশ্যটা। পুলিশ তাকে বলেছিল, দৌড় দে। আর দৌড়ে পালানোর সময় পেছন থেকে গুলি করে। সেই ছেলেটাই আমাদের শহীদ খুবাইব বিন এ রহমান।
শহীদ খুবাইব ছিলেন এক নিভৃতচারী আলেমে দ্বীন। জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলার পাড় যাত্রাবাড়ী মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। উজানী মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব আল্লামা আব্দুর রহমান সাহেবের ছেলে খুবাইব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিতেন। আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে উঠলেও দমে যাননি স্বৈরাচার বিরোধী অকুতোভয় এ বীর।যেই সোমবার শহীদ হয় তার পরের শুক্রবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল বলে জানা যায়।
সেদিন থানার ভেতর থেকে শতাধিক পুলিশ হঠাৎ বের হয়ে ওপেন ব্রাশফায়ার শুরু করে। সেসময় প্রায় ৩০/৪০ জন মানুষ আইল্যান্ডের পেছনে এবং পিলারের আড়ালে আশ্রয় নেয়। পুলিশ এগিয়ে এসে সেই ৩০/৪০ জনকে পাখির মতন ব্রাশফায়ার করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কমেন্ট: “ভাই এই ঘটনাটা তিনটা বাজে হয়েছে। ভাই ঠিক ওই সময় আমি এই জায়গাতে ছিলাম আমার চোখের সামনে ৩০ জনকে মেরে ফেলছে। আমরা ৪০-৫০ জন বরাবর থানার ওটা পাশে নীল বিল্ডিং তার নিচে লুকিয়ে ছিলাম তখন পুলিশ ফায়ার করতে করতে আমাদের কাছে আসে ঠিক তখন আমাদের দুইটা ভাইয়ের গায়ে গুলি লাগে একজনের মাথায় আরেকজনের বুকে তখন আমরা চিৎকার করে বলতেছিলাম আমাদের গায়ে আর গুলি কইরেন না। ওর মাথা দিয়ে প্রচুর রক্ত পরতেছিল পুলিশ আমাদের কথা একটুও শুনতে চাইতেছিল না আমাদের দিকে বন্দুক তাগ করে এক থেকে দুই ফুট ব্যবধানে সমানে গুলি করতে থাকে।ওই সময়টা কি যে বিভর্স ছিল তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। আমার পরিস্থিতিটা তখন কি হয়েছিল একমাত্র আল্লাই ভালো জানে। আমি তখন দোয়া ইউনুস আর কালিমা শরীফ পড়তেছিলাম আমরা ওদের পা পর্যন্ত ধরেছি মাফ করে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ বাবা পর্যন্ত ডেকেছে গুলি না করার জন্য কিন্তু এরা কারো কথা শুনে নাই গুলি চালিয়েছে। ভাই বিশ্বাস করবেন না ওই সময়টা কি যে জঘন্য ছিল। ওই সময়টার কথা মনে হলে সারা শরীর কেপে ওঠে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা।”
শহীদ খুবাইব এর নাম ছিল একজন সাহাবির নামে যিনিও মর্মান্তিক ভাবে শহীদ হয়েছিলেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই খুবাইব আর সোয়াইব দুই ভাই প্রত্যেকদিন একসাথে আন্দোলনে যেতেন। শহীদ হওয়ার আগের দিন রাতে মাকে খুবাইব বলেন, “মা আমার নাম খুবাইব, আমিও মনে হয় শহীদ হব। আমার মাথাটা কামায় দেন।” পরেরদিন ভাই সোয়েবকে ছাড়াই বের হয়েছিলেন আন্দোলনে। সাথে ছিল উনাদের ড্রাইভার। ঘটনার সময় ড্রাইভারের হাতে গুলি লাগে আর খুবাইবের কিডনিতে। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মেলে খুবাইবের লাশ। এখন পর্যন্ত পাওয়া হিসাব মতে ২৪ এর গনঅভ্যুত্থানে ৭৭ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও আলেম শহীদ হন।খুবাইবের আব্বা এখন প্রতিদিন কাজ শেষে খুবাইবের কবরের পাশে বসে থাকেন আর সন্তানকে ডাকতে থাকেন।
